খামার বিচিত্রা
www.khamarbichitra.com
কৃষি
এগ্র বাংলা
www.agrobangla.com
কৃত্রিম প্রজননে রুই জাতীয় মাছের ব্যবস্থাপনা ও প্রজনন কৌশল
ব্রুড মাছ ব্যবস্থাপনা:ব্রুড মাছের পুকুরের পানির গভীরতা ৫/৬ ফুট হওয়া বাঞ্চনীয়। পানির গভীরতা বেশি হলে মাছের ডিম পরিপক্ব হতে সময় লাগে বেশি। আবার পানির আয়তন বেশি হলেও অর্থাত্ মাছের ঘনত্ব কম হলেও মাছের ডিম পরিপক্ব হতে সময় বেশি লাগে। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছি-
কোনো পুকুরে পানির আয়তন বেশি হলে মাছ বৃদ্ধির সুযোগ পায়। আর ডিম পরিপক্ব হওয়ার সময়ে যদি মাছের ঘনত্ব কম থাকে তাহলে মাছের শরীরের বৃদ্ধির ফলে ডিমে পেট পরিপূর্ণ হতে সময় বেশি লাগে। অর্থাত্ পরিপক্ব হতে সময় লাগে বেশি। সে কারণেই মাছের একটা নির্দিষ্ট ঘনত্বে রাখা উচিত। যাতে ব্রুড মাছ মজুদের পর মাছের শরীরের যেন বৃদ্ধি না ঘটে। আর তাই মাছের মজুদ ঘনত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্দিষ্ট বয়সের মাছের মজুদ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। খুব ঘন ঘন জাল টানা উচিত নয়। কারণ ঘন ঘন জাল টানলে মাছের উপর এক ধরনের পীড়ন হয় যে কারণে মাছের ডিম পরিপক্ব হতে সময় লাগে বেশি। তাই যথাসম্ভব যত কম জাল টানা যায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে মাছে শীতকালে যেন কোনো প্রকার রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত না হয়। আর সেজন্য শীত আসার আগে থেকেই পুকুরে ১৫ দিন অন্তর অন্তর পানি পরিবর্তন করা দরকার। ঘন ঘন পানি পরিবর্তন করলে একদিকে যেমন মাছ রোগমুক্ত থাকে অন্যদিকে মাছের পরিপক্বতাও একটু এগিয়ে নেয়া যায়।
মাছ মজুদের পর সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
শীতকালের আগে ব্রুড মাছকে সাধারণত ১% হারে খাবার দিলেই চলে। কার্প জাতীয় মাছের খাবারে ২০ থেকে ২৫% প্রোটিন থাকা আবশ্যক। শীতের পর ৩ থেকে ৫% হারে খাবার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এখানে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে, মাছের খাবার প্রয়োগের সময় পুকুরে পানি যেন নষ্ট না হয়।
যখনই মনে হবে যে খাবারের পরিমাণ বেশি হচ্ছে তখনই খাবার কমিয়ে দিতে হবে অথবা খাবার বন্ধ রাখতে হবে। আর তা না হলে পুকুরে অ্যামোনিয়া গ্যাস হয়ে অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে মাছ মারা যেতে পারে। বিশেষ করে সিলভার কার্প মাছ সামান্য অক্সিজেন স্বল্পতায় মারা যায়। ব্রুড মাছ যাতে মারা না যায় সেজন্য নিচের পদ্ধতিগুলো মেনে চললে মাছ মারা যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে- ১. ব্রুড মাছের পুকুরে তাত্ক্ষণিক শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। যখনই মাছ অক্সিজেন স্বল্পতার জন্য পানির উপর ভেসে উঠবে তখনই শ্যালো দিয়ে মাটির নিচের পানি উপর থেকে ফেলতে হবে যাতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সৃষ্টি হয়। ২. যে দিক হতে শ্যালো দিয়ে পানি পড়তে থাকবে তার বিপরীত দিক হতে পাতিল দিয়ে ঢেউ সৃষ্টি করতে হবে যাতে ভেসে ওঠা সব মাছ শ্যালো দিয়ে পরা পানির কাছাকাছি যেতে পারে। বিচ্ছিন্নভাবে ঢেউ সৃষ্টি করলে ভেসে ওঠা মাছ শ্যালোর পানির কাছাকাছি যেতে পারে না। ৩. বৃষ্টির দিনে বা মেঘলা আবহাওয়ায় পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় আর সেজন্য এই সমস্ত দিনে খাবার বন্ধ রাখা জরুরি। ৪. মাছ অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে ভেসে উঠলে তা উপরে আলোচিত পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করার পর ২ থেকে ৩ দিন খাবার বন্ধ রাখতে হবে। অন্যথায় আবার মাছ ভেসে উঠতে পারে। ৫. ব্রুড মাছের পুকুরে রাতের বেলায় বিশেষ করে শেষরাতে প্রতিদিনই পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কারণ মাছের পুকুরে শেষরাতে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। ৬. সমস্ত মাছ পানিতে ভেসে উঠার আগের দিন অল্প পরিমাণে অর্থাত্ প্রথম দিন ২/১টি মাছ পানিতে ভেসে ওঠে আর দ্বিতীয় দিন ব্যাপকভাবে মাছ ভেসে উঠতে দেখা যায়। আর সেজন্য প্রথম দিন ২/১টি মাছ ভেসে উঠলেই পুকুরের খাবার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। অথবা পুকুরে পানি ছাড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্রুড মাছ হল একটা হ্যাচারির প্রাণ। তাই ব্রুড মাছকে যেভাবেই হোক বাঁচিয়ে রাখতে হবে। (চলবে) [ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড কমপ্লেক্স হ্যাচারি, ময়মনসিংহ]
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস